
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের আয়োজনে ‘মাস রেয়ারিং এন্ড ফিল্ড রিলিস অব বায়োকন্ট্রোল এজেন্টস’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আজ ০৩ মে (বুধবার) সকাল ১০.১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যলয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মোসাম্মৎ হোসনে আরা।
তিনি বলেন, ফসল উৎপাদনে কৃষকরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, তার মধ্যে ক্ষতিকারক পোকামাকড় অন্যতম। এই ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যাতে মাটি ও পানি দূষণসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেটিই হলো এই গবেষণার মূল বিষয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশসম্মতভাবে ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট প্যারাসাইটিক ইনসেক্ট লালন-পালন ও ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন এর আগেও গবেষণায় অনেক সাফল্য পেয়েছে। এই গবেষণাও এতদাঞ্চলের মানুষের উপকারে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ। কি-নোট স্পিকার হিসেবে খুলনা অঞ্চলের ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট প্যারাসাইটিক ইনসেক্ট ব্যবহারের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক ইউনিভার্সিটি প্রফেসর ও আইপিএম ইনোভেশন ল্যাবের পরিচালক ড. আর মুনিয়াপ্পান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খান। এ অনুষ্ঠানে প্রকল্পটির খুলনা অঞ্চলের পরিচালক কীটতত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. শিমুল দাস প্যারাসিটয়েড এর উপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ খুলনা অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা ও প্রান্তিক কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে খুলনা অঞ্চলের কৃষি কর্মকর্তা ও প্রান্তিক কৃষকদের প্যারাসাইটিক ইনসেক্ট লালন-পালন ও তাদের ফিল্ড রিলিজ দেখানো হয়। ক্রমবর্ধমান ক্ষতিকর পেস্টিসাইড এর করাল গ্রাস থেকে মানুষ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য বায়কন্ট্রোল এজেন্ট প্যারাসাইটিক ইনসেক্ট ব্যবহার এর উপর জোর দেয়া হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়ের এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের এন্টোমোলজি ল্যাব ফিড দ্যা ফিউচার এর অর্থায়নে এ পর্যন্ত পাঁচটি প্যারসাইটিক ইনসেক্ট (Habrobracon hebetor,Trichogramma japonicum, Trichogramma pretiosum, Trichogramma evanescens andTrichogramma chilonis) মাল্টিপ্লাই করতে সমর্থ হয়েছে। যাদের মধ্যে Trichogramma ফসলের ক্ষতিকারক পোকার ডিম নষ্ট এবং Habrobracon ক্ষতিকারক পোকার লার্ভা নষ্ট করে প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড় দমন করবে।
প্রান্তিক কৃষকরা এ পাঁচটি প্যারসাইটিক ইনসেক্ট হাতে পেয়ে অনেক আনন্দিত ও উৎসাহিত হন এবং তারা ও মনে করেন, এই বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষিতে বালাইনানাশকের ব্যবহার কমাতে পারবে। সাথে সাথে এ অঞ্চলের মানুষদের কীটনাশকমুক্ত সবজি উপহার দিতে পারবে। এসময় সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা এই রকমের বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট দিয়ে বালাই দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলোজি ডিসিপ্লিনকে ধন্যবাদ জানান।